গাংনী প্রতিনিধি , তোফায়েল হোসেন:
মেহেরপুরের গাংনীর ১৭ জন শ্রমিক সৌদি আরবে গত দুই মাস ধরে বন্দি জীবন যাপন করছে। ভাগ্যবদলের স্বপ্ন নিয়ে মানব পাচারকারীদের প্রলোভনে পড়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিল মেহেরপুরের গাংনীর কতিপয় যুবক। সহায় সম্বল বিক্রি করে আদম দালালের হাতে তুলে দিলেও সুখ নামের সোনার হরিণের দেখা পায়নি তারা।
বরং ভাগ্যে জুটেছে নির্মম অত্যাচার অনাহার। এদের মধ্যে অনেকেই শুণ্য হাতে বাড়ি ফিরলেও কাজ না পেয়ে বন্দি হয়ে রয়েছে ১৭ জন। বন্দি স্বজনদের ফিরিয়ে আনতে আদম দালাল নাহিদের কাছে ধর্ণা দিলেও কোন সুষ্ঠু জবাব বা সুরাহা মেলেনি। তাদের পরিবারে নেমে এসেছে শুধুই হাহাকার।
জানা গেছে, ক্লিনারের কথা বলে প্রতিজনের নিকট থেকে ৬ লাখ টাকা করে নিয়ে সৌদি আরবে পাঠিয়েছেন আদম দালাল গাংনী উপজেলার হিজল বাড়িয়া গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে নাহিদ।
সে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে ভূয়া ভিসা দিয়ে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দিয়ে বিদেশ নিয়ে গিয়ে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে এবং ওই সব গরীব অসহায় যুবকদের টাকা দিয়ে নিজের বাড়ী ও দোকানঘর নতুন সাজে সাজিয়ে তুলেছে। সৌদি আরবে যাওয়ার দশ, দিন পর মোবাইল ফোনে খবর আসে তাদেরকে ইয়ারপোর্ট থেকে কেউ রিসিভ করতে আসেনি একদিন পর তারা নিজেরাই উদ্দেশ্য বিহীন ভাবে ইয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে পড়ে।
পরে আদম দালাল তাদের ভূয়া কোম্পানির ভিসা দিয়েছে বলে জানতে পারে। যে কোম্পানির ভিসা দেওয়া হয়েছে সেই নামের নাকি কোন কোম্পানি সেখানে নেই। কোম্পানির কোন ঠিকানা বা কোন কাজ না পেয়ে গত দুই মাস যাবৎ অনাহারে অর্ধাহারে কোন রকম বেঁচে আছে তারা।
আজ কাল করে ২মাস যাবৎ একটি ঘরের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে কোন খাবার ও দেওয়া হচ্ছেনা। যারা সৌদিতে আটকা পড়ে আছে তারা হলো, গাংনী উপজেলার হিজল বাড়িয়া গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে উজ্জল হোসেন, মহিরুদ্দিনের ছেলে ইলিয়াস হোসেন, আব্দুর রহমানের ছেলে টুকু, রশিদ শেখের ছেলে রুবেল হোসেন, কিয়ম মোল্লার ছেলে শফি,। একই উপজেলার কালী গাংনী গ্রামের ইয়ার বক্সের ছেলে নিফাজ উদ্দিন, জামাল হোসেনের ছেলে কামরুল ইসলাম, চায়নার ছেলে সোহান, জফের আলীর ছেলে মাহবুল ইসলাম, মেহেরপুর সদরের বামুন পাড়ার মজিবর রহমানের ছেলে সুমন হোসেন, সুরাত আলীর ছেলে জাকিরুল ইসলাম, দৌওলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি গ্রামের জবেদ আলীর ছেলে জীবন আহমেদ, হজরত আলীর ছেলে এনামুল হক প্রমুখ।
উজ্জল হোসেনের স্ত্রী সাগরিকা জানান, আমার পিতার নিকট থেকে জমি বন্দুক ও আমার মামার কাছ থেকে ধার নেওয়া ও আমার শ্বশুর জামাল হোসেন বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে ধার করে সর্বমোট ৬ লক্ষ টাকা আদম দালাল নাহিদকে দিয়ে আমার স্বামীকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তার স্বামী উজ্জল হোসেন সৌদি আরবে পৌছানোর মাত্র ১০ দিন পর মোবাইল ফোনে কান্নাকাটি ও অনাহার এবং কোম্পানি ভূয়া ও কোন কাজ না পাওয়ার বিষয়টি জানায়।
উজ্জল হোসেন মোবাইল ফোনে মেহেরপুর নিউজের সাংবাদিক তোফায়েল হোসেনকে আরও জানায়, তার এলাকার ৫জনসহ আরো বিভিন্ন এলাকার মোট ১৭জন গত দুই মাস ধরে অনাহারে অর্ধাহারে বন্দি জীবন যাপন করছে। বর্তমানে তিন বেলা খাবারও জুটছে না তাদের কপালে।
সে আরও বলেন, ধর্মচাকী গ্রামের আদম দালাল আবু তাহেরের অফিসের মাধ্যমে তারা সৌদি আরবে গিয়েছে। সকলের পরিবার একই কথা জানালেন , তারা টাকাসহ তাদের ছেলে ফেরত পেতে চাই এবং প্রতারক আদম দালালের বিচার দাবি করেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত হিজলবাড়িয়া গ্রামের আদম দালাল নাহিদ জানান, আমি আমার গ্রামের ৫জনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছি, একটু সমস্যা হয়েছে তবে তাদের যে কাজ দেওয়া হয়েছে তারা সে কাজ করছে না তাই একটু অসুবিধা হয়েছে।
সৌদি আবরে বসবাসরত ইন্ডিয়ার দালাল বাদশা সে নাকি সৌদি আরব থেকে পালিয়ে গেছে যে কারণে বন্দি যুবকরা কাজ পায়নি এমন প্রশ্নের জবাবে আদম দালাল নাহিদ বলেন, তার মা মারা গেছে সে বাড়ীতে গেছে আগামীকাল আবার সৌদি আরবে চলে আসবে। তখন কোন সমস্যা হবে না।
এ ব্যাপারে বিশ্বাস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর চেয়ারম্যান আবু তাহের মোবাইল ফোনে বলেন, আমি ১১২জনকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছি তারা সকলেই কাজ পেয়েছে তবে এই ১৭জন জোট করে কাজ করছে না। তারা যেহেতু টাকা দিয়েছে মাত্র তিন লক্ষ তাই তাদের ক্লিনারের কাজ দিতে পারছি না। তাছাড়া ক্লিনারের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ভুক্তগোগী টুকু তাহেরের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় জানায় সে ৬ লক্ষ টাকা দিয়েছে। তবে বেশী টাকা নিলে নাাহদ নিতে পারে আমি মাত্র তিন লক্ষ টাকা নিয়েছি।
তবে কথা বার্তার এক পর্যায়ে তাহের আলী জানান, আমার সরকার অনুমোদিত লাইসেন্স আছে আমি চিটার না আমার লাইসেন্স নং- ১৩৭৪। মেহেরপুর জেলার আমারই শুধু লাইসেন্স আছে। ওরা যদি দেশে ফিরেও আসে তবে আমি দরকার হলে টাকা ফেরত দেব।
এবিষয়ে গাংনী থানার ওসি ওবাইদুর রহমান জানান, প্রবাশীদের সমস্যার সমাধানে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রবাসী কল্যাণ হেল্প রয়েছে সেখানে অভিযোগ করলে মানুষ উপকৃত হতে পারে।