মেহেরপুর নিউজঃ
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের বাসিন্দা বামুন্দীর আলফালাহ্ ক্লিনিকের নার্স নার্গিস বেগম হত্যা মামলায় মোঃ বাশারুল ইসলাম এবং ফরজ আলী নামে দুই জনের ফাঁসি ও ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা সহ বিভিন্ন ধারায় বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত ।
রবিবার সকালের দিকে মেহেরপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস এ রায় দেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদ্ব পলাতক রয়েছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বাসারুল ইসলাম সাহেবনগর গ্রামের ফোরকান আলীর ছেলে এবং ফরজ আলী একই গ্রামের জামিল হোসেনের ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে জমি সংক্রান্ত বিরোধের ধরে ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট নার্গিস বেগমকে তার সৎ ছেলে ইয়াকুব আলী বামুন্দি আলফালাহ্ ক্লিনিকের সামনে থেকে অপহরণ করে। পরে নার্গিস বেগমের বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় তার মেয়ে তাসলিমা খাতুন তাকে খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে গাংনী থানায় একটি জিডি করেন। পরে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে নিহত নার্গিস বেগমের মেয়ে তসলিমা খাতুন বাদী হয়ে দন্ডবিধির ৩৬৪ ও ৩৪ ধারায় গাংনী থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।
পরে ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি গাংনী থানার পুলিশ বাসারুল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দুইদিন পর পুলিশ ইয়াকুব আলী এবং তারও ৪ দিন পর ফরজ আলিকে গ্রেফতার করেন। গ্রেপ্তার তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এবং তাকে ধর্ষণ শেষে খুন করে বলে আদালতের কাছে স্বীকার করেন।
২৪ জানুয়ারি বাসারুলের ব্যবহৃত টয়লেটের সেফটি ট্যাংক এর ভেতর থেকে নার্গিস বেগমের অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করেন। লাশ উদ্ধার এবং সুরতহাল রিপোর্টের পর গাংনী থানার এসআই বিশ্বজিৎ কুমার মামলার তদন্তকাজ সম্পন্ন করেন। ওই ঘটনায় পরে ইয়াকুব সহ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতায় ৩ জনের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণিত হওয়ায় দন্ডবিধির ৩৬৪, ৩০২, ২০১, ৩৪ ও ৩৭৯ ধারায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২৪/১৮। জি আর কেস নং ২৫৮/১৮।সেশন কেস নং ২৫৬/১৯। পরে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রাথমিক তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৩০ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
হত্যা সংগঠিত হওয়ার পূর্বে নার্গিস বেগমকে জুসের মধ্যে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয় বলে তারা স্বীকার করেন। ধর্ষণের ঘটনায় একই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ৯ (৩) ধারায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আরেকটি মামলা করা হয়।
হত্যার মামলায় মোটা ২৮ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেন। মামলা চলাকালীন সময় ইয়াকুব আলী অসুস্থ জনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মামলায় চার্জশিট ভুক্ত আসামী বাসারুল ও ফরজ আলীর বিরুদ্ধে আনিত ৩০২ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত তাকে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করেন এবং ২৫ হাজার টাকা অর্থ দন্ডে দন্ডিত করেন।
একই মামলায় দন্ডবিধির ৩৬৪ ধারায় ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
মামলা ৩৭৯ ধারায় দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড। দন্ডবিধির ২০১ ধারায় ৩ বছর করে কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা করে জরিমান, অনাদাযে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন।
ঘোষিত রায়ে সবগুলো অপরাধ একই ঘটনা সম্পর্কিত হওয়ায় তাদের প্রদত্ত সাজা পৃথকভাবে নয় বরং একত্রে কার্যকর হবে মর্মে ঘোষণা দেওয়া হয়। একই সাথে আসমিদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়।
আসামিদ্বয় পলাতক থাকায় তাদের আটকের দিন থেকে সাজার কাজ শুরু হবে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট কাজী শহীদুল হক এবং আসামি পক্ষে কামরুল হাসান ও আতাউর রহমান কৌশলী ছিলেন।